সংকটে ফ্রিল্যান্সিং
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য আমাদের দেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটাতে সহায়তা করেছেন দায়িত্বশীলরা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১ উৎক্ষেপণের ফলে বাংলাদেশ যোগাযোগ ব্যাবস্থার যুগান্তকারী উন্নতি সাধিত হয়েছে। এর ফলে আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিং করে অর্থনৈতিক ভূমিকা রাখতে পারছি।
গ্রাহক অপেক্ষা করে না
ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে আমাদের ফ্রিল্যান্সাররা দীর্ঘমেয়াদি ধাক্কা খেলো। কয়েক দিন কাজ করতে না পারার কারণে আমাদের ফ্রিল্যান্সারদের রিভিউ কমে সব কাজ চোলে যাবে ভারত ও পাকিস্তান দেশ গুলোতে।
এ অবস্থায় একজন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ঘুরে দাঁড়ানো কষ্টকর হবে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগবে বলে মনে করছেন তারা। সংশিষ্টরা বলেছেন,ফাইভারে ১০ লক্ষ কাজের ফরমায়েশ আছে,যার ৭০ শতাংশ বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে ছুটে যাবে। কারণ গ্রাহকরা বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন অপেক্ষা করবে না। তাদের দরকার কাজ , তারা অন্য জায়গা চোলে যাবে। আসার কথা হচ্ছে ,ইতিমধ্যেই সীমিত আকারে ইন্টারনেট চালু করা হয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিং এর হাতেখড়ি
বাংলাদেশ সর্বপ্রথম ২০০৮ সালে ফ্রিল্যান্সিং যুগে প্রবেশ করে। তখন মাত্র ৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার অর্জন করতে উন সক্ষম হয়, যা এখন বেড়ে ৫০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। যি অকল্পনীয় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে একমাত্র বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জনের জন্য শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ইন্টারনেট সরবরাহ সুবিধাকরণের মাধ্যমে। যার ফলে, বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম তুল ফ্রিল্যান্সিং সেবার দেশ, যেখানে ৫ লাখ ফ্রিল্যান্সার নিয়মিত কাজ করে কিন্তু সর্বমোট রেজিস্ট্রার্ড ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা যে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার। বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা ডিজিটাল সেলস মার্কেটিং সেকশনে বেশি কাজ করে, যেখানে ভারতের ফ্রিল্যান্সাররা টেকনোলজি অ্যান্ড সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে বেশি পারদর্শী। বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য দরকার আরও বেশি প্রশিক্ষণ এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা।
অর্থনীতি ইতিহাস
বর্তমানে বাংলাদেশ প্রায় ৬ লক্ষ ৫০ হাজার ফ্রিল্যান্সার বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে ৫০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার যা কিনা প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা আয় করে থাকে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং বাংলাদেশর বেকার সমস্যার সমাধানে অবধান রেখেছে। অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট একটি গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সিং সেবা প্রদানকারী দেশ, যা কিনা ১৬ শতাংশ ফ্রিল্যান্সিং সেবা প্রধান করে থাকে। যেখানে ভারত ২০ শতাংশ ফ্রিল্যান্সিং সেবা প্রধান করে প্রথম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশী তরুণদের এই ধারাবাহিকতা বজায় থালে গ্লোবাল ফ্রিল্যান্সিং হবে পরিণতি পাবে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং।
ফ্রিল্যান্সারদের ভূমিকা
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফ্রিল্যান্সারদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবুও আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ে অনেক ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। সব থেকে বড় সমস্যা হলো গুণগত প্রশিক্ষণের অভাব এবং কষ্টসাধ্য পেমেন্ট সিস্টেম, ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। 'এ ছাড়াও রয়েছে কিছু অসাধু চক্র, যারা ফ্রিল্যান্সিং কাজ ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। বাংলাদেশের তরুণ সমাজ তথ্য ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে অনেকাংশে পিছিয়ে রয়েছে যার জন্য বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা কষ্টকর হয়। ফ্রিল্যান্সারদের স্বীকৃতি উল্লেখযোগ্য একটি সমস্যা।
পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রে ফ্রিল্যাসিংয়ের স্বীকৃতি খুবই কম। যার জন্য অনেক তরুণ- তরুণী ফ্রিল্যান্সিংয়ে আগ্রহ হারাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি না পেলে ফ্রিল্যান্সিংয়ে আশানুরূপ ফলাফল দুরূহ হয়ে পড়বে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে অবশ্যই বেকার সমাজকে যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম করে তুলতে হবে। কারণ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব। আমাদের তরুণ সমাজকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে বেকার নামক অভিশাপ থেকে সমাজকে মুক্ত করা সম্ভব এবং আমরা যদি আমাদের
তরুণ সমাজকে যথাযথ কাজে লাগাতে পারি, তা হলে ভবিষ্যতে ফ্রিল্যাসিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ করা সম্ভব এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান ও অন্যতম মাধ্যম। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটাতে সহায়তা করেছেন দায়িত্বশীলরা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের ফলে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নতি সাধিত হয়েছে। এর ফলে আমরা খুবই সহজে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভূমিকা রাখতে পারছি। গুণগত মান বজায় রাখতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফ্রিল্যান্সিং বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। স্মার্ট বাংলাদেশে সব ব্যবসাই এখন ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত।
সর্বশেষ
ই-কমার্স ও ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসা তো আছেই, সেই সঙ্গে
সব বড় ব্যবসাই এখন কোনো না কোনোভাবে ইন্টারনেটের
সঙ্গে সম্পৃক্ত। দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত। আর্থিক লেনদেন তো বটেই, এখন দেশের প্রায় সব সেবাই ইন্টারনেটনির্ভর। কারখানার উৎপাদন অনেকাংশে অটোমেটেড। এমনকি শিক্ষা কার্যক্রমও অনেকাংশে ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে গেছে। এই বাস্তবতায় ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং একটি সম্ভাবনাময় কর্মসংস্থান ক্ষেত্র। জনপ্রিয় ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস ফাইভারের তথ্যমতে আমেরিকা, পাকিস্তান ও ভারতের পরেই সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের অবস্থান। বৃহস্পতিবার রাতে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সাররা। কেননা এ খাতের পুরোটা ইন্টারনেটনির্ভর। কয়েক দিন ইন্টারনেট না থাকায় সারা দেশের ফ্রিল্যান্সাররা বিদেশ থেকে গ্রাহক বা বায়ারের পাঠানো বার্তার উত্তর দিতে পারছেন না। আবার কারও কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার সময় পার হয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়া ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দেশের আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা ফ্রিল্যান্সাররা। কারণ চলমান কাজের ক্লায়েন্টদের সঙ্গে হঠাৎ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব ক্লায়েন্ট অন্য কোনো দেশের মাধ্যমে তাদের কাজ করিয়ে নেবে এবং তারা আর না-ও ফিরতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মুক্ত পেশাজীবীরা। • দেশের ফ্রিল্যান্সিং ও সফটওয়্যার রফতানিকেন্দ্রিক ব্যবসা বিদেশি ক্রেতাদের ওপর নির্ভরশীল। এই ব্যবসাটা চলে মূলত আস্থার ভিত্তিতে। এভাবে ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে অনেক ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। সেটা হলে ডলারের প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেই সঙ্গে ই-কমার্স খাতে যে বিদেশি বিনিয়োগ আছে, তাতে প্রভাব পড়তে পারে।