খাবার পরে হাঁটার 9টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

বর্তমানের ব্যস্ত জীবনে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা আমাদের জন্য একটি কঠিন কাজ।  তবে,   কিছু ছোট পরিবর্তন আমাদের জীবনে বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে।যেমন, খাবারের পরে সামান্য হাঁটা। খাবারের পর হাঁটা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার নিয়ে আসতে পারে। সাধারণত, আমরা খাবার শেষে বসে থাকার বা বিশ্রাম নেওয়ার অভ্যাসে অভ্যস্ত, কিন্তু খাবারের পর হাঁটা একটি সহজ এবং কার্যকর অভ্যাস হতে পারে।  চলুন জেনে নিই খাবারের পর হাঁটার ৯টি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা।

খাবার পরে হাঁটার 9টি স্বাস্থ্য উপকারিতা

খাবার পরে হাঁটার ধারণা

প্রাচীনকাল থেকেই খাবারের পর হাঁটার উপকারিতা নিয়ে নানা ধরনের ধারণা প্রচলিত ছিল। প্রাচীন গ্রীক ও রোমান সভ্যতার মানুষও খাবারের পরে হালকা হাঁটার পরামর্শ দিতেন। আধুনিক বিজ্ঞানও এই অভ্যাসের সুফলকে সমর্থন করে।  খাবারের পর সামান্য হাঁটা হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। খাবারের পর বসে থাকলে বা শুয়ে পড়লে শরীরে খাদ্য হজম হতে সময় বেশি লাগে এবং এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

উপকারিতা 

 হজমে সহায়তা

খাবার পর আমাদের সবার একটি বাজে অভাবস রয়েছে ,যা হলো সরাসরি শুয়ে পড়া। খাবার পর আমাদের সবার উচিত হাঁটা হাঁটি  করা এইকাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ , উপকারিতা হলো হজম প্রক্রিয়াকে  উন্নত করা। পাকস্থলীতে খাবার প্রবেশ করার  পর হজম এনজাইমগুলো সক্রিয় হয়। হাঁটার ফলে পাকস্থলী ও অন্ত্রের গতি বেড়ে যায়, ফলে খাবার দ্রুত হজম হয়। এতে করে  বমি বমি ভাব, গ্যাস, বা পেটের অস্বস্তি কমাতে কার্যকর।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ

আমরা বর্তমান সময় যারা ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিসের সমস্যায় দীর্ঘদিন ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে খাবারের পর হাঁটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আমরা অনেকে জানিনা বা আবার কেও কেও জেনে থাকি খাবার খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। হাঁটা হাটি করলে এই শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে,  কারণ হাঁটার সময় পেশিগুলি সক্রিয় হয়, যা শরীরের গ্লুকোজ গ্রহণের হার বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ

হাঁটা হাটি করা ওজন নিয়ন্ত্রণের একটি কার্যকরী পদ্ধতি। খাবারের পর হাঁটা হাটি করলে আমাদের শরীরে ক্যালোরি পোড়াতে সহায়তা করে। খাবারের পরে একটানা বসে না থেকে , যদি অল্প সময় হাঁটা যায়, তাহলে আমাদের শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত ক্যালোরি খুব সহজে কমানো সম্ভব হয়।  এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং মেটাবলিজমকে সক্রিয় রাখে।

ফোলাভাব ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান

আমরা অনেকেই খাবার খাওয়ার কিছু সময় পর পেটে ফোলাভাব বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাযর  ভোগান্তি হয়। হাঁটা হাঁটি করলে আপনি এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাবেন । আমাদের খাবার খাওয়ার পর যদি পেটের ভেতরের চাপ অনুভব হয়  হালকা করার জন্য সামান্য হাঁটা খুবই জরুরি । এটি গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটির সমস্যার প্রতিরোধেও কার্যকর।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি

খাবারের পর হাঁটা শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্যকে নয় বরং মানসিক স্বাস্থ্যকেও উন্নত করে। হাঁটার সময় শরীরে এন্ডোরফিন হরমোনের মুক্তি ঘটে  থাকে , যা আমাদের দেহের মেজাজকে ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে। মানসিক চাপ এবং মনকে শান্ত রাখার একটি সহজ উপায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

হাঁটা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক একটি কার্যকরী পদ্ধতি। খাবারের পর সামান্য হাঁটাহাঁটি করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা হয়। যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য খাবারের পর হালকা হাঁটা করা উপকারী হতে পারে।

বিপাকক্রিয়ার উন্নতি

বিপাকক্রিয়া (মেটাবলিজম) একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা আমাদের শরীরের খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তর করে থাকে। আমাদের খাবার খাওয়ার পর হাঁটার ফলে বিপাকের গতি বাড়ে এবং শক্তি উৎপাদন হয় অতি দ্রুত। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে জমে থাকা চর্বি দ্রুত পোড়ানো সম্ভব হয় থাকে, যা আমাদের দেহের ওজন কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে সহায়ক

হাঁটা কেবল মাত্র দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলায় নয়,এটি দীর্ঘস্থায়ী রোগের প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নিয়মিত খাবারের পর হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, এতে করে হৃদরোগ,  স্ট্রোক এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো ঝুঁকি পূর্ণ রোগ থেকে রাখা পেতে পারি।

রাতে ভালো ঘুম নিশ্চিত করা

আমাদের অনেকের রাতে ভালো ঘুম হয় না,ভালো ঘুম পাওয়া একটি দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায়। খাবার খাওয়ার পর সামান্য হাঁটাহাঁটি করলে আমাদের শরীর ও মনকে শিথিল করা সম্ভব হয়, যা আমাদের রাতে ভালো ঘুমের জন্য সহায়তা করবে। এটি নিদ্রাহীনতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

কতক্ষণ হাঁটা উচিত?

খাবারের পর হাঁটা নির্ভরকরে আমাদের শারীরিক সক্ষমতার ওপর। সাধারণতো , একটি ব্যাক্তির খাবারের পর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য হালকা হাঁটা হাঁটি করা যথেষ্ট । এছাড়া, যদি কেউ নিজ ইচ্ছায় আরও বেশি সময় হাঁটতে চায় , সেক্ষেত্রে ৩০ মিনিট পর্যন্ত ধীরে ধীরে হাঁটা হাঁটি করতে পারবে।

খাবারের পর হাঁটার সময় সতর্কতা

হাঁটা হাঁটি করার সময় কিছু বিষয় মাথায়রাখতে হবে । খাবার খাওয়ার পর পর আমাদের দ্রুত বা জোরে হাঁটাযাবে না । নরমাল ধীর গতিতে এবং স্বাভাবিকভাবে হাঁটলে হজমের উপর চাপ পড়ে না। আপনি যদি কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগে থাকেন সেক্ষেত্রে হাঁটার আগে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

খাবারের পর হাঁটার বিকল্প উপায়

আমরা অনেকে আছি যারা কিনা হাঁটতে পারি না , তারা কি করবেন? হালকা স্ট্রেচিং বা শরীরের ব্যায়াম করতে পারেন। এটি আপনার শরীরকে সতেজ রাখবে এবং খুব দ্রুত হজমেও সহায়তা করবে।

উপসংহার

খাবারের পর আমরা কিছুটা হাটা হাঁটি করলে শরীর ও মনের জন্য অত্যন্ত উপকারী।  এটি আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, আমাদের রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও, এটি দীর্ঘস্থায়ী রোগের প্রতিরোধেও অনেক কার্যকর। এই সহজ অভ্যাসটি গড়ে তুলতে আমাদের বেশি সময় লাগবে না , কিন্তু এর উপকারিতা অসীম।


Share this post with your friends and family

See previous post See next post