নতুন মনিটর কেনার সময় সবাই যে ১০ টি কমন মিসটেক করে থাকে!

নতুন মনিটর কেনা অনেকের জন্য একটি রোমাঞ্চকর এবং গুরুত্বপূর্ণ   সিদ্ধান্ত । তবে, বেশিরভাগ মানুষ কিছু সাধারণ ভুল করে থাকে, যা পরবর্তীতে অসন্তুষ্টির কারণ হতে পারে।সঠিক মনিটর নির্বাচন না করলে শুধু অর্থের অপচয় হয় না, বরং 

আপনার কাজ বা গেমিং অভিজ্ঞতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো নতুন মনিটর কেনার সময় যে ১০টি সাধারণ ভুল করা হয় এবং সেগুলো কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়।

নতুন মনিটর কেনার সময় সবাই যে ১০ টি কমন মিসটেক করে থাকে!


সঠিক সাইজের মনিটর না বাছাই করা


একটি মনিটরের আকার ব্যবহারকারীর প্রয়োজনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। অনেক সময় মানুষ বড় স্ক্রিনের প্রতি আকৃষ্ট হয়, কিন্তু তাদের ডেস্কের আকার বা বসার দূরত্বের বিষয়টি মাথায় রাখে না। কিছু ব্যবহারকারী ছোট স্ক্রিন কেনার পর হতাশ হন।


বিভিন্ন ব্যবহারের জন্য সাইজের প্রয়োজনীয়তা



গেমিং বা সিনেমা দেখার উদ্দেশ্যে মনিটর নির্বাচন করলে, বড় সাইজের স্ক্রিন আপনাকে আরও ভাল অভিজ্ঞতা দেবে। অন্যদিকে, অফিস কাজ বা সাধারণ ব্যবহারের জন্য ২৪ থেকে ২৭ ইঞ্চির মনিটর যথেষ্ট কার্যকর।


রেজোলিউশন নিয়ে ভুল ধারণা



রেজোলিউশন হলো একটি মনিটরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, যা ছবির স্পষ্টতা নির্ধারণ করে।  অনেকের ধারণা, যত বেশি রেজোলিউশন ততই ভালো হবে। কিন্তু রেজোলিউশন নির্বাচন করা উচিত মনিটরের আকার এবং ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী।


1080p, 1440p, এবং 4K এর পার্থক্য



মনিটরের আকারের উপর নির্ভর করে 24-27 ইঞ্চির মনিটরের জন্য 1080p একটি উপযুক্ত পছন্দ। তবে, 32 ইঞ্চি বা তার চেয়ে বড় মনিটরের ক্ষেত্রে 1440p বা 4K রেজোলিউশন প্রয়োজন, যাতে ছবির স্পষ্টতা এবং সূক্ষ্মতা বজায় থাকে।


রিফ্রেশ রেটের প্রতি অমনোযোগী থাকা



রিফ্রেশ রেট হল প্রতি সেকেন্ডে মনিটরের স্ক্রিনে নতুন ছবি প্রদর্শনের সংখ্যা। যা গেমিং করার সময় এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর, কিন্তু যারা সাধারণ ব্যবহারের জন্য মনিটর নির্বাচনকারী ব্যবহারকারীদের জন্য এটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে নাও হতে পারে।


গেমিং বনাম সাধারণ ব্যবহারের জন্য রিফ্রেশ রেট



রিফ্রেশ রেট বোঝায় প্রতি সেকেন্ডে মনিটরের স্ক্রিনে কতবার নতুন ছবি দেখা যায়। গেমারদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর, তবে সাধারণ ব্যবহারের জন্য মনিটর কেনার সময় এটি তেমন গুরুত্ব পায় না।


প্যানেল টাইপ বাছাইয়ে ভুল করা



যখন কেউ মনিটর কেনার সিদ্ধান্ত নেন, তখন প্যানেল টাইপের দিকে নজর না দেওয়া একটি বড় ত্রুটি। প্যানেল টাইপের কারণে মনিটরের রঙের সঠিকতা, প্রতিক্রিয়া সময় এবং দর্শন কোণ পরিবর্তিত হয়।


IPS, TN, এবং VA প্যানেলগুলোর সুবিধা-অসুবিধা



  • IPS প্যানেল: ভালো কালার রেপ্রোডাকশন এবং ভিউয়িং এঙ্গেল। তবে রেস্পন্স টাইম একটু বেশি।

  • TN প্যানেল: রেস্পন্স টাইম খুবই কম, যা গেমিং এর জন্য ভালো, কিন্তু কালার এবং ভিউয়িং এঙ্গেল তুলনামূলক খারাপ।

  • VA প্যানেল: ভাল কালার কনট্রাস্ট, কিন্তু রেস্পন্স টাইম মাঝারি।



নতুন মনিটর কেনার সময় সবাই যে ১০ টি কমন মিসটেক করে থাকে!



সংযোগ পোর্ট নিয়ে না ভাবা


মনিটরের সাথে কোন ডিভাইস সংযুক্ত করবেন, তা নিয়ে কি আপনি চিন্তা করেছেন? HDMI, DisplayPort, বা USB-C পোর্ট রয়েছে কিনা, তা যাচাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।ভুল পোর্ট বেছে নিলে আপনার ডিভাইসের সাথে মনিটর সংযোগ করা একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।


HDMI, DisplayPort, USB-C: কোনটি বেছে নেবেন?



USB-C নতুন ডিভাইসগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, কিন্তু গেমিং এবং ভিডিও আউটপুটের ক্ষেত্রে DisplayPort এবং HDMI বেশি কার্যকরী হিসেবে বিবেচিত হয়।


রেস্পন্স টাইম নিয়ে অবহেলা করা



নতুন ডিভাইসগুলোর সাথে USB-C জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, তবে গেমিং এবং ভিডিও আউটপুটের জন্য DisplayPort এবং HDMI অধিক কার্যকরী বিকল্প।


গেমিং এবং ভিডিও এডিটিং-এর ক্ষেত্রে রেস্পন্স টাইম এর গুরুত্ব



গেমিং এর ক্ষেত্রে, রেস্পন্স টাইম ১-৫ms হওয়া ভালো। গেমার এবং ভিডিও এডিটরদের জন্য রেস্পন্স টাইম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রেস্পন্স টাইম যত কম হবে, ততই কার্যকরী হবে।


অ্যাডজাস্টেবিলিটি ও এরগোনমিক্স উপেক্ষা করা



দীর্ঘ সময় ধরে মনিটর ব্যবহারের সময় আরামদায়ক অবস্থান বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  কিন্তু অনেকেই মনিটর কেনার সময় এর অ্যাডজাস্টেবিলিটি এবং এরগোনমিক্সের বিষয়টি উপেক্ষা করেন।


আরামদায়ক ব্যবহার এবং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা



মনিটরের উচ্চতা, টিল্ট এবং পিভট সমন্বয় করার সুযোগ থাকে, তবে আপনি দীর্ঘ সময় কাজ করতেসক্ষম হবেন, যা আপনার ঘাড় ও পিঠের জন্যও ভালো।


কালার একুরেসি নিয়ে গুরুত্ব না দেয়া



ফটো এডিটিং বা ভিডিও প্রোডাকশনের সঙ্গে যারা  যুক্ত, তাদের জন্য কালার একুরেসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ ব্যবহারকারীরা এ ব্যাপারটা অবহেলা করলেও  পেশাদারদের জন্য এটি একটি বড় ভুল হিসেবে গণ্য হতে পারে।


কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য সঠিক কালার প্রোফাইল



যদি আপনি একজন কনটেন্ট  নির্মাতা হন, তাহলে নিশ্চিত করুন যে আপনার মনিটর sRGB, AdobeRGB বা DCI-P3 প্রোফাইল সমর্থন করে কিনা।


ফিউচার প্রুফিং নিয়ে না ভাবা



প্রযুক্তি অগ্রগতি পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই মনিটর ক্রয়ের সময় ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তাগুলো মাথায় রাখা জরুরি।


ভবিষ্যতের আপগ্রেড ও পরিবর্তন সহজ করা



যখন আপনি ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ আপগ্রেড করেন, তখন মনিটরের বৈশিষ্ট্যগুলি আপনার ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য যথাযথ কিনা, তা খেয়াল রাখা উচিত।


মনিটর কেনার সময় কিছু জরুরি টিপস


নিজের প্রয়োজন ও বাজেটের সাথে মিলিয়ে চলুন


ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ আপগ্রেডের সময় মনিটরটি আপনার ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণের জন্য উপযুক্ত কিনা, তা বিবেচনা করা অপরিহার্য।


ভবিষ্যতের প্রয়োজন বিবেচনা করে কেনাকাটা করুন


একটি মনিটর কেনার সময় নিশ্চিত করুন যে এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে,  সেই চিন্তা মাথায় রাখু


উপসংহার


নতুন মনিটর কেনার প্রক্রিয়া সহজ মনে হলেও, বাস্তবে এটি ততটা সহজ নয়।  দি আপনি পূর্বে উল্লেখিত সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে চলেন এবং আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পছন্দ করেন, তাহলে আপনার মনিটর কেনার অভিজ্ঞতা অনেক ভালো হবে। শুধু দাম বা ব্র্যান্ড নয়, বরং বৈশিষ্ট্য এবং আপনার ব্যবহারের ধরন অনুযায়ী মনিটর কিনুন।


Share this post with your friends and family

See previous post See next post