৫,০০০ কোটি টাকা তারল্য সুবিধা পেল সংকটে থাকা ৬ ব্যাংক
ঋণ জালিয়াতি ও অন্যান্য অনিয়মের কারণে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোকে তারল্য গ্যারান্টি প্রদান করছে বাংলাদেশ ব্যাংক, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে। গত এক মাসে ৬টি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকার গ্যারান্টি লাভ করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ১৪৯৫ কোটি টাকা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ১০০০ কোটি টাকা,গ্রোবাল ইসলামী ২৯৫ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৭৭৫ কোটি টাকা,ইউনিয়ন ব্যাংক ১৫০ কোটি টাকা এবং ন্যাশনাল ব্যাংক ৮২০ কোটি টাকা পেয়েছে।তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে সহায়তা হিসেবে তারল্য সুবিধা প্রদান করেছে সোনালী ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক।
ব্যাংকারদের বক্তব্য অনুযায়ী, আন্তঃব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সহায়তার কারণে দুর্বল ব্যাংকগুলোর প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। অনেক গ্রাহকের উদ্বেগ দূর হয়েছে এবং এখন আর আগের মতো এসব ব্যাংকে আমানতের টাকা তুলতে গ্রাহকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন না। তবে, অনেক ব্যাংক এখনও গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী আমানতের টাকা ফেরত দিতে সক্ষম হচ্ছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য জানাচ্ছে, মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) চারটি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি সুবিধা হিসেবে ৮৭৫ কোটি টাকা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ৬৯৫ কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৫০ কোটি টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ২৫ কোটি টাকা পেয়েছে।
বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে যেসব ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে,তাদের সংকট সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে, বাংলাদেশ ব্যাংক সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করার জন্য ১০টি শক্তিশালী ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে এক বৈঠকে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) তাদের তারল্য সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জানান। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের প্রভাবাধীন অনেক ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এস আলমের অধীনে থাকা ৮টি ব্যাংকসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
আগস্ট মাসের শেষে, দেখা যায় যে বেসরকারি খাতে অন্তত ৯টি ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি ১৮,০০০ কোটি টাকার বেশি হয়ে গেছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ৭,২৬৯.৬৬ কোটি টাকা, যা সর্বোচ্চ; সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতি ৩,৩৯৪ কোটি টাকা এবং ন্যাশনাল ব্যাংকের ঘাটতি ২,৩৪২ কোটি টাকা। অন্যান্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঘাটতির পরিমাণ হলো ইউনিয়ন ব্যাংক ২,২০৯.১৫ কোটি টাকা,ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ২,২০১.৯৫ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ৩৮০.৯৫ কোটি টাকা এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৩৯.৩৯ কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পদ্মা ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতি ছিল যথাক্রমে ২৩৪.৪৮ কোটি টাকা ও ৯৫.৪২ কোটি টাকা।